পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৩

 আমার দেশ

২৫ অক্টোবর মন্ত্রিসভার মেয়াদ শেষ : অর্থমন্ত্রী। দুই নৌকায় পা দিলে সবকিছু হারাতে হবে : তোফায়েল। সরকারের নীতিতে আমও যাবে ছালাও যাচ্ছে : মেনন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
« আগের সংবাদ পরের সংবাদ»
আগামী ২৫ অক্টোবর বর্তমান মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়ার পরবর্তী তিন মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। তখন সরকার অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রীকে হয়তো রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করবেন। প্রধানমন্ত্রী হয় আগের মন্ত্রিসভা নিয়েই সরকার পরিচালনা করবেন, অথবা নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। গতকাল রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করলেও সংসদের মেয়াদ থাকবে আগামী বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। আর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আগামী বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংসদ বহাল থাকছে। সেক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো প্রয়োজন হবে না।
বাজেট প্রণয়ন নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক ডাকা হলেও এতে রাজনৈতিক আলোচনা প্রাধান্য পায়। সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা বৈঠকে সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), টেস্ট রিলিফ (টিআর) কর্মসূচির নামে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রাজনৈতিক নেতারা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে বৈঠকে অভিযোগ ওঠে। সংসদ সদস্যরা দুর্নীতিগ্রস্ত এসব কর্মসূচি দ্রুত বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফজলে রাব্বি মিয়া, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সংসদ সদস্যদের বক্তব্যে উঠে আসে রাজনৈতিক অস্থিরতা।
অনুষ্ঠানে সরকারের উদ্দেশে রাশেদ খান মেনন বলেন, আপনারা একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন, অন্যদিকে ধর্মদ্রোহিতার জন্য ব্লাসফেমি আইন নিয়ে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে যেসব কথা বলেছেন, এতে আমি আতঙ্কিত। তার কথায় মনে হয়েছে, আমরা বাংলাদেশকে ‘ইসলামাইজেশনে’র দিকে ঠেলে দিচ্ছি। এতে দেশ কোথায় গিয়ে পৌঁছবে। এর ফলে আমাদের আমও যাবে, ছালাও যাচ্ছে বলে আমার ধারণা।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে দ্বিমুখী নীতি বাদ দিন। দুই নৌকায় পা দিলে চারদিকই হারাতে হবে। লক্ষ্য ঠিক করে আমাদের অগ্রসর হতে হবে। আমরা লক্ষ্য ঠিক করতে পারছি না। শেষমেশ আমরা দু’কূলই হারাব।
বৈঠকে টিআর, কাবিখা কর্মসূচির নামে ব্যাপক লুটপাটের সমালোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। তারা বলেন, টিআর, কাবিখা থেকে কোনো সুফল আসছে না। এক-দুই কেজি চালে কারও কোনো লাভ হয় না। প্রতি টন চাল ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে যায় সিন্ডিকেট। ফলে রাজনীতিবিদদের ইমেজ নষ্ট হয়। এটা একটা খারাপ দৃষ্টান্ত।
তোফায়েল আরও বলেন, অর্থমন্ত্রীর নিজের এলাকায়ও টিআর, কাবিখা বরাদ্দ রয়েছে। ওই এলাকায় মসজিদের নামে এক লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোনো মসজিদ ১০ হাজার টাকার বেশি পায়নি। দালালরা সব টাকা লুটে নিয়েছে।
জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে না। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছি। জনসাধারণকে আর মিথ্যা আশ্বাস দিতে চাই না। টাকার অভাবে আমরা কাজ করতে পারছি না। পল্লী অবকাঠামো খাতে তিনি অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।

উত্তরের ১৬ জেলায় স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত : ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আগুন অর্ধশত শিবির নেতাকর্মী গ্রেফতার

ডেস্ক রিপোর্ট
« আগের সংবাদ পরের সংবাদ»
ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসেনকে গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের প্রতিবাদে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় শিবিরের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল গতকাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়েছে। তবে বিভিন্নস্থানে শিবির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ প্রায় অর্ধশতাধিক শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। আমাদের আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
রাজশাহী : হরতালে জনজীবন ছিল অচল, তবে রাজশাহীর কোথাও বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে রাজশাহীর সপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ-র্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে মেস ও বাসাবাড়ি থেকে ছাত্রশিবিরের ৩৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ১৯টি চাইনিজ কুড়াল, ইসলামী ব্যাংকের চেক, ইসলামি বই ও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ উদ্ধার করে বলে পুলিশ দাবি করেছে।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের গত সোমবার পুলিশের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল সকালে নগরীর হাদির মোড়, তালাইমারী, শাহমখদুম কলেজের সামনে, শ্যামপুকুর ও বালিয়াপুকুরসহ নগরীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ছাত্রশিবির রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : হরতালের সমর্থনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে ছাত্রশিবির মিছিল বের করলে পুলিশের গুলিতে ৩ জন আহত হয়। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিনোদপুর মিতা স্টুডিওর সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিনোদপুরের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে ২ জনকে আটক করেছে মতিহার থানা পুলিশ।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় পাশে মণ্ডলের মোড় থেকে হরতালের সমর্থনে মিছিল নিয়ে শিবির কর্মীরা বিনোদপুর বাজারে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে কাঠের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট, টিয়ারশেল, শর্টগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ছাত্রশিবির কর্মীরাও পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ-শিবির সংঘর্ষে শিবিরের তিন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
বগুড়া : হরতালে বগুড়ায় রেলের প্যান্ডেল ক্লিফ খুলে ফেলায় ৫ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে তা মেরামত করার পর আবার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। রাতে বগুড়া-কাহালুর মাঝামাঝি কৈচোর নামক স্থানে রেল লাইনের প্রায় ১ কিলোমিটারজুড়ে প্যান্ডেল ক্লিফ খুলে ফেলা হলে শান্তাহার-বগুড়া রুটের সব ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
এদিকে হরতাল চলাকালে সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে ও মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে পিকেটিং করে হরতাল সমর্থকরা।
দিনাজপুর : দিনাজপুরে বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালে কয়েকটি স্থানে শিবিরকর্মীরা গাড়ি ভাংচুর, টায়ারে আগুন ও সড়ক অবরোধ করে।
গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় দিনাজপুর শহরের কালিতলা ও মুন্সিপাড়া এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করে শিবির। এ সময় টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে শিবিরের নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়।
সকাল ৮টায় দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দর এলাকায় ঢাকা ফেরত একটি নাইট কোচ এবং দুটি ট্রাক ভাংচুর করে হরতালকারীরা। শহরের সব দাকানপাট, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, মিল-কারখানা বন্ধ ছিল।
এদিকে চিরিরবন্দরের হাজীর মোড়ের বাজার এলাকায় মাহমুদপুর রসুলপুর আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মোকাররম হোসেনের বাড়িতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এলাকাবাসীর তাড়া খেয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়।
রংপুর : পুলিশ সকালে নগরীর পার্ক মোড়সহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। হরতালে নগরীতে রিক্সা অটো রিক্সা ছাড়া যান বাহন চলাচল করেছে। হরতালের সমর্থনে সকালে নগরীর কলেজ রোডে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও টায়ার জ্বালিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পিকেটিং করেছে শিবির।
সকালে মিঠাপুকুরে শিবির মিছিল বের করলে পুলিশ ধাওয়া দিলে সংঘর্ষ হয়। এতে এক পুলিশসহ আহত হয় পাঁচজন। পিকেটাররা রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের বৈরীগঞ্জ ও গড়েরমাথায় ট্রাকে আগুন, গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এছাড়াও রংপুরের মাহিগঞ্জ-পীরগাছা সড়কের বকশীরপুলের কাছে টায়ারে আগুন-গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করে পিকেটাররা। এ সময় একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
নগরী এবং আশপাশের হাটবাজারগুলোতেও কোনো দোকানপাট খোলেনি। আন্ত ও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়েও যায়নি।
সিরাজগঞ্জ : হরতাল চলাকালে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার সীমান্ত বাজার এলাকায় একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ, ২টি মোটরসাইকেল ও একটি সিএনজি ভাংচুর করেছে হরতাল সমর্থকরা। গতকাল সকালে উত্তরাঞ্চলগামী (ঢাকা মেটো-চ ১৬-৭৬৯৭) একটি ট্রাক কামারখন্দ উপজেলার সীমান্ত বাজার পৌঁছলে হরতাল সমর্থকরা ট্রাকটির গতিরোধ করে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়।
অপরদিকে হরতাল সমর্থকরা উল্লাপাড়ায় দুটি মোটর সাইকেল ও সিএনজি এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চণ্ডিদাসগাঁতীতে অপর এক িমেটিরসাইকেল ভাংচুর করা হয়।
নওগাঁ : গতকাল সকালে নওগাঁয় ঝটিকা মিছিল করেছে শিবির নেতাকর্মীরা। সকাল সোয়া ৭টার দিকে নওগাঁ-বগুড়া মহাসড়কের ইয়াদ আলীর মোড় থেকে তারা মিছিলটি বের করে। মিছিল শেষে শিবির নেতাকর্মীরা সড়কের ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ গড়ে তোলেন। ৮টার দিকে শহরের কাঁঠালতলী এলাকা থেকে পিকেটিং করার সময় জাহেদুল ইসলাম ও মাহমুদ হাসান নামে ২ শিবির কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। নওগাঁ সদর থানার ওসি মোজাম্মেল হক জানান, আটক ২ শিবিরকর্মী নওগাঁ নামাজগড় আলিয়া মাদরাসার ছাত্র।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছাত্রশিবিরের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। সকালে শহরের শিবতলা, সিডিডিবি মোড় ও মহাননন্দা সেতু এলাকায় অবস্থান নেয় পিকেটাররা। এ সময় তারা এসব এলাকায় মিছিল করে। দূরপাল্লাসহ জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে যানবাহন চলাচল করেনি। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল।
পাবনা : গতকাল হরতাল চলাকালে সকাল ১০টায় ছাত্রশিবির পাবনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে। মিছিলটি অফিস থেকে বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বড়বাজার দই বাজার মোড়ে এলে পুলিশ মিছিলের পেছন থেকে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিবির কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশ ৬ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। লাঠিচার্জে ৫ শিবির কর্মী আহত হয়। এ সময় ৮নং ওয়ার্ডের জামায়াতের সেক্রেটারি ও টেবুনিয়া কলেজের প্রভাষক আবদুল ওয়াদুদকে গ্রেফতার করে পুলিশ পায়ে গুলি করেছে বলে জামায়াত অভিযোগ করে।
এদিকে বেলা ১টার সময় শহরের শিবরামপুরের বাড়ি থেকে ৫নং ওয়ার্ডের জামায়াতের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, শিবির শহর অফিস সেক্রেটারি গোলাম মোস্তফা, শিবিরকর্মী আল আমিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে শান্তিপূর্ণভাবে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালে জেলা থেকে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ দেখা গেছে। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার খাতাপাড়া এলাকায় গতকাল দুপুরে হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করতে গেলে ২ শিবির কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
নাটোর : নাটোরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। সকালে শহরের বড়হরিশপুর এলাকার শিবিরের নেতাকর্মীরা মিছিল, রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে পিকেটিং ও সমাবেশ করে। হরতালের কারণে দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। শিবির কর্মীরা জেলার ৫টি থানাসহ ১০টি স্পটে পিকেটিং করেছে বলে জানা গেছে।
জেলা সভাপতি আসলাম হোসেন জানান, এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষার কারণে সকাল ৮টা থেকে ১১টা এবং বেলা ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত পিকেটিংয়ে বিরতি দেয়া হয়।
গাইবান্ধা : সকালে গোবিন্দগঞ্জের কালীতলায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে শিবির কর্মীরা রাস্তায় গাছের গুঁড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে পিকেটিং করে জামায়াত-শিবির। এছাড়াও পলাশবাড়ীর জুনদহ, মহেষপুর, হাসপাতাল মোড়ে হরতাল সমর্থনে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা পিকেটিং করছে।
হরতালে শহরের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ ছিল।
ঠাকুরগাঁও : হরতালে গতকাল ভোর থেকেই শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে পিকেটিং করে নেতাকর্মীরা। এছাড়া পল্লীবিদ্যুত্ সংলগ্ন ছোট খোচাবাড়ি এলাকায় ঢাকা-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কে গাছ ও গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং রাস্তার ওপর শুয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে শিবির কর্মীরা।

হেফাজতে ইসলামের হুশিয়ারি : ৬ এপ্রিলের লংমার্চে বাধা দিলে লাগাতার ঢাকা অবরোধ : অগ্রবর্তী দল নিয়ে আল্লামা শাহ আহমদ শফী ঢাকায়

স্টাফ রিপোর্টার
« আগের সংবাদ পরের সংবাদ»
৬ এপ্রিল লংমার্চ সফলের আহ্বানে গতকাল রাজধানীতে বিশাল মিছিল ও সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর। বিকালে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর পাশে হাউজ বিল্ডিং চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, দেশে যখন পবিত্র কোরআন ও মহানবীর (সা.) ইজ্জত-আব্রুর ওপর আক্রমণ হয়েছে, ঠিক সে মুহূর্তে সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী লংমার্চের ডাক দিয়েছেন। তিনি ঈমান ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার ডাক দিয়েছেন। এতে ঝাঁপিয়ে পড়া সব মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। সরকারকে এ লংমার্চ সফলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, এ লংমার্চ বানচালের কোনো চক্রান্ত করা হলে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায় বহন করতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। এই লংমার্চে বাধা দেয়া হলে অনির্দষ্টকালের জন্য ঢাকা অবরোধের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী।
এদিকে জামালপুরে হেফাজতের বৈঠক থেকে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। অপরদিকে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী গতকাল সন্ধ্যায় লংমার্চের অগ্রবর্তী কাফেলা নিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
চট্টগ্রামের বাইরে সারাদেশে সমান প্রস্তুতি নিচ্ছে হেফাজতে ইসলামসহ অন্য ইসলামি দলগুলো।
রাজধানীর সমাবেশে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ৬ এপ্রিল প্রমাণ হবে বাংলাদেশ মুসলমানদের দেশ। এটি আলেম-ওলামাদের অধিকার আদায়ের একটি ঐতিহাসিক দিন। এ লংমার্চের অনুমতি নিয়ে টালবাহানা হলে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে তা সামাল দেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না। জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস বলেন, এটা কোনো দল বা গোষ্ঠীর আন্দোলন নয়, ঈমানি আন্দোলন। সরকারকেও এতে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, শাহবাগে নাস্তিক ব্লগারদের জন্য মাসের পর মাস রাস্তা বন্ধ করে যেসব কাজ ঘটিয়েছেন তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করতে হবে। কোনো শক্তিই এই লংমার্চ ঠেকাতে পারবে না।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, লংমার্চে বাধা দিলে সারাদেশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলবে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী বলেন, প্রচলিত আইনে নয়, অবশ্যই স্বতন্ত্র আইনে নাস্তিক ব্লগারদে বিচার করতে হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মুফতি মো. তৈয়্যব, মাওলানা আতাউল্লাহ প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বিশাল একটি মিছিল বের হয়ে দৈনিক বাংলা, মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে এসে শেষ হয়। মিছিলের সামনে ও পেছনে ব্যাপকসংখ্যক পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে অংশ নিয়েছিল। এছাড়া সমাবেশের আগে থেকেই ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে কড়া অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
চট্টগ্রামবাসী প্রস্তুত, বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয়ার অভিযোগ : লংমার্চে যোগ দিতে প্রস্তুত চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। শুধু চট্টগ্রাম থেকেই প্রায় পাঁচ হাজার গাড়ি নিয়ে রোডমার্চ শুরুর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন হেফাজত নেতারা। একই ভাবে দেশের অন্যসব জেলা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঢাকা অভিমুখে রওনা হবে।
হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। তবে বাধা দেয়া হলে তারাও ছেড়ে কথা বলবে না। যেখানে লংমার্চে বাধা দেয়া হবে, সেখানেই গড়ে তোলা হবে কঠিন প্রতিরোধ। আর তাতে যদি জীবন উত্সর্গ করতে হয়, সেজন্যও প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। দেশের ৬৪ জেলার প্রতিটিতে এরই মধ্যে গঠন করা হয়েছে শহীদে বদরি কাফেলা। প্রতিটি কাফেলার সদস্য সংখ্যা ৩১৩ জন। অনেক জেলায় একাধিক বদরি কাফেলাও গঠিত হয়েছে। লংমার্চকে জিহাদ আখ্যায়িত করে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, আল্লাহ ও নবী-রাসুলের ইজ্জত রক্ষা করতে শাহাদাতবরণে প্রস্তুত রয়েছে আল্লাহ ও নবীর অসংখ্য প্রেমিক। যে কোনো মূল্যে তারা লংমার্চ নিয়ে ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে। সরকার যদি বাধা দেয় তাহলে ৭ এপ্রিল থেকে ডাকা হবে লাগাতার হরতাল, এমনকি দেয়া হতে পারে আরও কঠোর কর্মসূচি।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী গতকাল আমার দেশ-কে জানান, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ও ক্যাডার বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন মালিকদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে লংমার্চে গাড়ি সরবরাহ না করতে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুরসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীলরা আমাদের জানিয়েছেন, ওইসব এলাকায় পরিবহন মালিকদের হুমকি দেয়া হয়েছে। এ কারণে তারা গাড়ি দিতে রাজি হচ্ছে না। সরকার তার লোকজনকে দিয়ে গত বছর ১২ মার্চ বিএনপির ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচির সময় যেভাবে যানবাহন ও হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়ে সারাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল, এবারও ওই একই কৌশলে অগ্রসর হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থার লোক ও সরকারি দলের ক্যাডাররা এভাবে প্রভাব খাটাচ্ছে, সেসব এলাকায় আমরা হেফাজতের নেতাকর্মীদের বলে দিয়েছি তারা যেন ট্রাক, পিকআপ বা এ ধরনের যে কোনো ছোট যানবাহন ভাড়া করে হলেও ঢাকা অভিমুখে রওনা হন।
চট্টগ্রাম থেকে লংমার্চে ঢাকা অভিমুখে ছোট-বড় ৫ হাজার গাড়ি রওনা হবে—উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরই মধ্যে কিছু গাড়ি কনফার্ম করা হয়েছে। আরও কিছু গাড়ি ভাড়া নেয়ার চেষ্টা চলছে। চট্টগ্রামেও কোথাও কোথাও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন পরিবহন মালিকদের হুমকি দিচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী আরও বলেন, লংমার্চ সফল করতে জেলা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের শত ভাগ প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, লংমার্চে যেখানে বাধা দেয়া হবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে দেশ অচল হয়ে যাবে। ৭ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ডাকা হবে লাগাতার হরতাল। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী এরই মধ্যে দ্বীনের জন্য প্রয়োজনে শহীদ হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে রোডমার্চে গাড়ি না দেয়ার ব্যাপারে সরকারি কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগের কথা অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রামের পরিবহন মালিকরা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি কফীল উদ্দিন জানান, রোডমার্চের জন্য গাড়িভাড়া দেয়া-না দেয়ার বিষয়টি মালিকদের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। তবে চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রত্যেক মালিক রাস্তায় গাড়ি বের করা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
হেফাজতে ইসলামের প্রধান মাওলানা আহমদ শফী দু-একদিন আগেই ঢাকা পৌঁছবেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। জানা গেছে, লংমার্চে বাধা দেয়া হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে সারাদেশের কর্মী-সমর্থকদের নিজ উদ্যোগে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘেরাও কর্মসূচি সফল করতে ঢাকা ও আশপাশের জেলার কর্মী-সমর্থকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
হাটহাজারীতে মোটরসাইকেল শোডাউন : নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে আল্লামা আহমদ শফীর ডাকে লংমার্চে অংশগ্রহণের জন্য হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দিনব্যাপী বিভিন্ন উপ-কমিটির প্রস্তুতি সভা ও হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মিছিল, সমাবেশ, মোটরসাইকেল শোডাউন হয়েছে। এদিকে কর্মসূচি বাস্তবায়নে গতকাল হাটহাজারী মাদরাসার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিভিন্ন উপকমিটির সমন্বয় সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি জসিমুদ্দিন। এতে লংমার্চ উপলক্ষে প্রস্তুতি পর্যালোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়। আগামী শুক্রবার বাদ জুমা জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে লংমার্চের উদ্দেশে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত হয়। লংমার্চের সঙ্গে অভিজ্ঞ মেডিকেল টিমসহ তিনটি অ্যাম্বুলেন্স ও যাবতীয় ওষুধ সামগ্রী বহরের সঙ্গে থাকবে বলে জানা যায়।
চট্টগ্রামে ৫০৭ আইনজীবীর সমর্থন : লংমার্চ কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির ৫০৭ জন। এদিকে শনিবারের লংমার্চের সমর্থনে চট্টগ্রাম নগরীতে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে হেফাজতে ইসলাম নেতারা। বিবৃতিদাতারা ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও ভিন্ন মত দমনে সব নিষ্ঠুরতা বন্ধের জোর দাবি জানান।
বিবৃতিদাতারা হলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সদস্য অ্যাডভোকেট আলহাজ মোহাম্মদ কবির চৌধুরী, অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহম্মেদ মির্জা, অ্যাডভোকেট আহাম্মেদ ছগির, আবদুল কুদ্দুস, দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, শাহ আলম মিয়া, নাজিম উদ্দিন, আবদুস সোবহান, কফীল উদ্দিন চৌধুরী, আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি সেকান্দর বাদশা, আবদুস সাত্তার, আবদুস সাত্তার সরোয়ারসহ ৫৭০ জন বিশিষ্ট আইনজীবী।
ইসলামপুরে হেফাজতের সভা থেকে চারজন আটক : জামালপুরের ইসলামপুরে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি বাস্তবায়নের সভা থেকে গতকাল চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
দুপুরে ইসলামপুরের ধর্মকুড়া বাজার জামে মসজিদে লংমার্চ কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে একদল মুসল্লি পরামর্শ সভা করছিলেন। এ সময় পুলিশ এসে সভা ভঙ্গ করে দিয়ে চারজনকে আটক করে নিয়ে যায়।
সিলেট জমিয়তের বিশেষ টিম : সিলেটে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা জমিয়তের কার্যালয়ে শাখা সভাপতি মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দীনের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি ও আল্লামা আহমদ শফী ঘোষিত লংমার্চকে সর্বাত্মকভাবে সফল করে তোলার জন্য জমিয়ত, যুব ও ছাত্র জমিয়তকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়। সভায় লংমার্চ সফল করতে ৩১৩ জনের বিশেষ টিম গঠন করা হয়।
রাজশাহীতে ব্যাপক প্রস্তুতি : রাজশাহীতে হেফাজতে ইসলামের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। নেতারা জানিয়েছেন, রাজশাহী থেকে ব্যাপক সংখ্যক লোক লংমার্চে অংশ নেবে। এজন্য গতকাল সকালে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ রাজশাহীর মহাসচিব হাফেজ মাওলানা আবদুল জব্বারের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মাওলানা রুহুল আমীন, মাওলানা ইয়াকুব আলী, মাওলানা আবদুল্লাহ, মাওলানা হাফিজুর রহমান ও মাওলানা বুরহান উদ্দিনসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
নোয়াখালীতে গনসংযোগ : নোয়াখালীতে হেফাজত ও জমিয়ত নেতারা গতকাল জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক গণসংযোগ করেছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম নোয়াখালী জেলা সভাপতি শায়খুল হাদিস মাওলানা নজির আহমদ, সেক্রেটারি মাওলানা ইয়াকুব কাসেমী প্রমুখ।
রংপুরে কমিটি গঠন : রংপুরে গঠিত হয়েছে হেফাজতে ইসলামের কমিটি। মঙ্গলবার রাতে রংপুরের কারিমিয়া মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আলীকে আহ্বায়ক এবং কারামতিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা বায়েজীদ আহমদকে সদস্য সচিব করে ১০১ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছে। ৬ মার্চের লংমার্চের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছেন তারা।
বরিশালে হেফাজতের সমাবেশ : জীবন দিয়ে হলেও লংমার্চ বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন হেফাজতে ইসলাম বরিশাল শাখার নেতারা। গতকাল নগরীর খাজা মঈনুদ্দিন মাদরাসা মাঠে লংমার্চ উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। হেফাজতে ইসলাম বরিশাল মহানগর আমির মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুবের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা কাজী আবদুল মান্নান, মাওলানা রুহুল আমিন খান, মাওলানা নুরুর রহমান বেগ, মাওলানা হাফেজ রুহুল আমিন প্রমুখ।
নাটোর সমাবেশ : নাটোরে মিছিল-সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। গতকাল বাদ জোহর নাটোর কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে সমাবেশে বক্তারা বলেন, সারাজীবন কোনো নির্বাচনে বাম নেতা তথ্যমন্ত্রী ইনু ও মেনন এমপি জামানত ফেরত পাননি। আওয়ামী লীগের ঘাড়ে ভর করে এবার নির্বাচিত হয়ে বড় বড় কথা বলছেন। এ মেনন আর ইনুই আওয়ামী লীগকে ডোবাবে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাবেশের সভাপতি মাওলানা ইলিয়াস আহম্মেদ, অ্যাডভোকেট আমেল খান চৌধুরী প্রমুখ।
কমলগঞ্জ থেকে শতাধিক গাড়ি : লংমার্চকে সফল করতে হেফাজতে ইসলাম মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা কমিটির প্রস্তুতিমূলক সভায় ৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় শমসেরনগর দারুসসুন্নাহ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত সভা শেষে শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরে লিফলেট বিতরণ করা হয়। কমলগঞ্জ থেকে শতাধিক গাড়ি লংমার্চে যোগ দেবে।
মিরসরাইয়ে গণসংযোগ : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ব্যাপক গণসংযোগ চলছে। গত ১ এপ্রিল থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করছে হেফাজতে ইসলাম মিরসরাই শাখার নেতারা। সংগঠনটির মিরসরাই উপজেলা সভাপতি মাওলানা শহিদ আযমী, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জমির উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা জাফর উল্লাহ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মফিজ উল্লাহর নেতৃত্বে একটি দল গণসংযোগ পরিচালনা করছে।
গফরগাঁও কমিটি গঠন : ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা হেফাজতে ইসলামের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে সভাশেষে সর্বসম্মতিক্রমে মাওলানা মো. মনিরুল ইসলামকে সভাপতি ও মৌলভি মো. বাশির আহম্মদকে সাধারণ সম্পাদক এবং হাফেজ ইউসুফ বিন মনিরকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৪৫ সদস্যবিশিষ্ট গফরগাঁও উপজেলা শাখার হেফাজতে ইসলামের কমিটি গঠন করা হয়।
শিবচরে প্রস্তুতি সভা : গতকাল মাদারীপুরের শিবচরে লংমার্চ কর্মসূচি সফল করতে দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের তৌহিদি জনতার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভা ও শানে রিসালাত (সা.) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মাও. আবুল বাশার ফারায়েজীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় ফরায়েজী আন্দোলনের বিভিন্ন এলাকার দায়িত্বশীলরা বক্তব্য রাখেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মিছিল-সমাবেশ : গতকাল দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। পরে স্থানীয় টিএ রোডের তোফায়েল আজম মনুমেন্টের পাশে সমাবেশে মিলিত হন তারা। মাওলানা মুফতি আবদুর রহিম কাসেমীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মুফতি এনামুল হাসান, মাওলানা জিয়াউদ্দিন, মাওলানা আবু বক্কর, মাওলানা হোসাইন আহমেদ, মাওলানা মাসুদ প্রমুখ।
নগরকান্দায় ব্যাপক প্রস্তুতি : ফরিদপুরের নগরকান্দায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। লংমার্চে অংশগ্রহণের জন্য এরই মধ্যে কয়েক হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান তাদের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন বলে জানা গেছে।
দৌলতখানে শপথ গ্রহণ : ভোলার দৌলতখানে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ সফল করার দীপ্ত শপথ নিয়েছে উপজেলা হেফাজতে ইসলাম কমিটি। গতকাল উপজেলার ১০টি কওমি মাদরাসার কয়েক হাজার ছাত্র-শিক্ষক নবীপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাফনের কাপড় নিয়ে ৬ এপ্রিলের লংমার্চ সফল করতে এ শপথ নেন।
৬ এপ্রিল হাতে তাসবিহ, সঙ্গে জায়নামাজ ও মুখে আল্লাহর নাম দিয়ে ঢাকার সমাবেশে শরিক হন : আল্লামা আহমদ শফীর আহ্বান
৬ এপ্রিল সারাদেশ থেকে ঢাকা অভিমুখী ঐতিহাসিক লংমার্চ সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আমির, কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফী। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ৬ এপিল সকাল ১০টার মধ্যে হাতে তাসবিহ, সঙ্গে জায়নামাজ ও মুখে আল্লাহর নাম, সঙ্গে চিড়ামুড়িসহ হাল্কা খাবার নিয়ে লংমার্চ করে ঢাকার সমাবেশে শরিক হন। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় মহানগরগুলো থেকে শুক্রবার বাদ জুমা ঢাকার উদ্দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে রওনা করবেন।
তিনি বলেন, লংমার্চের আয়োজনকে প্রতিটি মুসলমানের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে আজ বাদ আসর সারাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা, থানা পর্যায়ে সমাবেশ ও প্রচার-মিছিল করুন। আমাদের প্রতিটি কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস। সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও আমাদের আন্দোলনের ভাষা হতে পারে না। সরকারকে আমি বলব, আমাদের এ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিগুলোতে আপনারা কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করবেন না। আমাদের কর্মীদের বাধার মুখোমুখি দাঁড় করে দেবেন না। আমরা ঈমানের তাগিদে, রাসুল (সা.)-এর মহব্বতে, ইসলামের হেফাজতে ওলামায়ে কেরামের দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে ময়দানে নেমেছি। রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য হাসিল আমাদের লক্ষ্য নয়। আমরা যে ১৩ দফা দাবি জাতির সামনে তুলে ধরেছি তাছাড়া অন্য কোনো দাবির সঙ্গে জড়িয়ে দেবেন না। অন্য কোনো দাবি হেফাজতে ইসলামের দাবি নয়। মনে রাখবেন ৬ এপ্রিলের লংমার্চে বা ঢাকার সমাবেশে কেউ কোনো দলীয় ব্যানার, ফেস্টুন আনবেন না অথবা কোনো ধরনের দলীয় স্লোগান, রাজনৈতিক স্লোগান দেবেন না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ঈমানদার মুসলমানের পাশাপাশি মহিলারাও এই ঈমানি আন্দোলনে শরিক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। তাদের আমি বলতে চাই, আপনারা ঘরে বসে আমাদের জন্য দোয়া করুন। আগামীকাল সারাদেশের মা-বোনেরা নফল রোজা রেখে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করুন। আল্লাহ আমাদের কামিয়াব করবেন।
লালবাগে ওলামা সম্মেলন : লংমার্চে বাধা দিলে ঢাকার সব প্রবেশ মুখ বন্ধ করে দেয়া হবে
গতকাল সকালে রাজধানীর লালবাগের কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলামের এক ওলামা সম্মেলনে নেতারা বলেছেন, নাস্তিক ব্লগারদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ যে ১৩ দফা দাবিতে ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে কোনো ধরনের বাধা প্রদান করা হলে ঢাকার সব প্রবেশ মুখ বন্ধ করে সারাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। এছাড়া ৭ এপ্রিল থেকে লাগাতার হরতাল চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামপ্রিয় জনতা ঘরে ফিরে যাবে না।
হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরী ও লংমার্চ সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী প্রমুখ। সম্মেলনে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার প্রায় আট শতাধিক ওলামা-মাশায়েখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা সদরে লংমার্চ সফল করার লক্ষ্যে প্রচার মিছিল করার জন্য ওলামা জনতার প্রতি আহ্বান জানানো হয়
লংমার্চের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জামায়াতের : ১৩ দফা দাবিতে হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ৬ এপ্রিলের লংমার্চ কর্মসূচির প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল এক বিবৃতিতে এই সমর্থন জানিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, হেফাজতে ইসলাম আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এটা কোনো দলের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠেনি। ঈমান রক্ষার দাবিতে এ দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের নিয়ে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিকভাবে এই প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করেছে। যারা ইসলামকে সমূলে উত্পাটন করতে চায়, তারা অত্যন্ত সুকৌশলে হেফাজতে ইসলামকে রাজনৈতিক রূপ দিতে চায়। তিনি হেফাজতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৬ এপ্রিল সারাদেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি সফল করার জানান।
নেজামে ইসলাম পার্টির সংবাদ সম্মেলন : গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে নেজামে ইসলাম পার্টির নেতারা হেফাজতে ইসলাম আহূত আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ ও মহাসমাবেশ সর্বাত্মকভাবে সফল করে ঈমানি দায়িত্ব পালনের জন্য দেশের সর্বস্তরের তৌহিদি জনতার প্রতি আহ্বান জানান। পুরানা পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, লংমার্চে বাধা দিলে সৃষ্ট তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া সামাল দেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্টির মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পার্টির সভাপতি মাওলানা আবদুর রকিব অ্যাডভোকেট। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মাওলানা ছামির উদ্দিন, সহসভাপতি মাওলানা আবদুর রশিদ মজুমদার, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আবদুল করিম খান ও মাওলানা শেখ লোকমান হোসেন প্রমুখ। এ সময় হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কর্মসূচি উপলক্ষে পার্টির ৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় কাউন্সিল স্থগিত ঘোষণা করে তা আগামী ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠানের তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
ঈমান রক্ষায় লংমার্চের অনুমতি দেয়ার আহ্বান শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের : বর্ষীয়ান আলেমে দ্বীন মাওলানা মুহিউদ্দীন খানসহ দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, সরকার নাস্তিক-মুরতাদ, আল্লাহ তায়ালা, মহানবী (সা.)-কে কটূক্তিকারী, শাহাবাগি নাস্তিকদের মাসের পর মাস পাহারা দিয়ে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্ববাসীর কাছে ঘৃণিত হয়েছে। অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামসহ আলেম ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও সর্বস্তরের তৌহিদি জনতার ঈমান রক্ষার লংমার্চের অনুমতি নিয়ে গড়িমসি করছে এবং তা বানচালের নানামুখী ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। যার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী অন্যরা হলেন খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সভাপতি শাইখ মাওলানা আবদুল মোমিন, খেলাফত মজলিশের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মাদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী প্রমুখ।
লংমার্চে বাধা দিলে সরকারের পতন ঘটবে : খেলাফত মজলিস আমির : খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন’, আল্লাহ, রসুল (সা.), ইসলামের অবমাননাকারী নাস্তিক-মুরতাদ ব্লগারদের শাস্তি প্রদানসহ ১৩ দফা দাবিতে আহূত আগামী ৬ এপ্রিলের লংমার্চে বাধা দিলে সরকারের পতন ঘটবে। এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ঈমান-আকিদার বিরুদ্ধে আঘাত সহ্য করবে না। ঈমানি চেতনা নিয়ে হাক্কানি আলেম-ওলামা, দ্বীনদার মুসল্লিরা মাঠে নেমেছেন কোনো বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করে তাদের দমানো যাবে না। গতকাল বিকালে খেলাফত মজলিসের নির্বাহী সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শফিক উদ্দিন, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন প্রমুখ।
দল-মতনির্বিশেষে ৬ মার্চের লং মার্চ সফল করুন : মুসলিম লীগ : ১৩ দফা দাবিতে আল্লামা আহমদ শফী (র.) আহূত ৬ এপ্রিলের লংমার্চ সফলের জন্য দল-মতনির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মুসলিম লীগের নেতারা। গতকাল এক বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে মুসলিম লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল হক মজুমদার ও মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের এই আহ্বান জানান।
ইসলামী ছাত্রসমাজ : ইসলামী ছাত্রসমাজ কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ছাত্র ঐক্যের শীর্ষ নেতা মুহাম্মদ ইলিয়াছ আতহারী বলেছেন, ছাত্রসমাজ সব বাধা উপেক্ষা করে ৬ এপ্রিল লংমার্চ কর্মসূচি সফল করতে হবে। সরকারের সব চক্রান্ত প্রতিহত করে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হলে লংমার্চ সফল করতে ছাত্রসমাজের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। গতকাল সকালে লংমার্চ সফল করার স্বেচ্ছাসেবকদের এক প্রস্তুুতি সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ছাত্র জমিয়ত : ছাত্রজমিয়তের নেতারা বলেছেন, খোদাদ্রোহী আওয়ামী লীগ আজ আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। আবু জেহেল-আবু লাহাবের প্রেতাত্মা এসব নাস্তিক-মুরতাদকে প্রতিহত করতে ও ইসলামবিদ্বেষী সব অপশক্তির মোকাবিলা করতে ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। গতকাল বিকালে জমিয়তের পল্টনে কার্যালয়ে ছাত্র জমিয়ত কর্মী শহীদ হাফেজ হোসাইন আহমদের দ্বিতীয় শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে নেতারা এসব কথা বলেন। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইমরানুল বারী সিরাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তৃতা করেন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামে নির্বাহী সভাপতি আল্লামা মুস্তফা আযাদ, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা গোলাম মহিউদ্দীন ইকরাম, মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমান প্রমুখ।
৬ মার্চের লংমার্চে নিউইয়র্কের ১৫০ আলেমের সমর্থন : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফী-ঘোষিত ৬ মার্চের লংমার্চকে সমর্থন জানিয়েছেন নিউইয়র্কের ১৫০ জন। এক যৌথ বিবৃতিতে এই সমর্থন জানানো হয়। বিবৃতিদাতারা হলেন বায়তুল জান্না মসজিদের ইমাম প্রফেসর মাওলানা মুহিববুর রহমান, সানিসাইড মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল কাদের, বেলাল মসজিদের ইমাম মুফতি আবদুল মালেক, বায়তুল হামিদ ইনস্টিটিউশনের সভাপতি মুফতি জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
এদিকে ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের লংমার্চে সমর্থন জানিয়েছে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট, মজলিসে দাওয়াতুস সুন্নাহ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম, বাংলাদেশ গণসেবা আন্দোলন, তাহফিজে হারামাইন পরিষদ, জাতীয় ইমাম সমিতি প্রমুখ সংগঠনের নেতারা।
লংমার্চ সফল করার আহ্বান জৌনপুরী পীর সাহেবের : জৌনপুরী পীর সাহেব ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী বলেছেন, আল্লাহ ও আল্লাহর আখেরী নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর শানে কটাক্ষকারী কুখ্যাত কাফের নাস্তিক ব্লগার শাহবাগিদের শাস্তির দাবিতে এবং ইসলামবিরোধী সব ধরনের চক্রান্ত নির্মূলের লক্ষ্যে ৬ এপ্রিলের লংমার্চে অংশগ্রহণ করা সব মুমিন মুসলমানের ওপর ফরজ।
গত মঙ্গলবার তাহরীকে খতমে নবুয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয় জৌনপুরী দরবার শরীফে তাহরীকে খতমে নবুয়তের এক জরুরি বৈঠকে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, লেবাসধারী এক শ্রেণীর ভণ্ডপীর ও আলেম নামধারী কিছু মোনাফেক ওলামায়ে ছু ৬ এপ্রিলের ঐতিহাসিক লংমার্চকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই লংমার্চ জামায়াত শিবির বা কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন নয়। বরং তা সব কাফের মোশরেক বাম, রাম, নাস্তিক ব্লগার ও ইসলামের দুশমনদের প্রতিহত করার লক্ষ্যে। তিনি দেশের সব ঈমানদারদের বামপন্থী মিডিয়া ও সরকারের দালাল মৌলভীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে ঐতিহাসিক লংমার্চে জানমাল নিয়ে অংশগ্রহণ করার আহ্বান করেন।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন তাহরীকে খতমে নবুয়ত বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীরজাদা সৈয়দ আলহাজ মাওলানা মো. এহছান উল্লাহ আব্বাসী, প্রেসিডিয়াম সদস্য পীরজাদা সৈয়দ মাওলানা মো. নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসী, প্রেসিডিয়াম সদস্য পীরজাদা সৈয়দ কারি মাওলানা মো. ওবায়েদ উল্লাহ আব্বাসী ও সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতী মুহাদ্দিস আলমগীর হোসাইন আনছারী প্রমুখ।